মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ন

অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার গর্ভবতী নারী

অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার গর্ভবতী নারী

স্বদেশ ডেস্ক:

নারীরা জীবনভর কমবেশি অবহেলার শিকার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে এটা আরও প্রকট হয়। যারা বাইরে কাজ করেন তাদের কাজের ধরন অনুযায়ী পরিশ্রম থাকেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কলিগরা ভালো হলে খানিকটা হেল্প করে আর না হলে সেভাবেই পুরোটা সময় পার করতে হয়। কোনো কোনো অফিসে রেস্টরুমও থাকে না। অসুস্থ শরীর নিয়ে তাকে চেয়ারেই কাটাতে হয় অথবা কাজেই কাটাতে সাত-আট ঘণ্টা। সে সময় খুব বেশি শারীরিক জটিলতা না হলে তারা ছুটিও নিতে চায় না কারণ সন্তান হওয়ার পর সন্তানের সঙ্গে থাকার জন্য ছুটি লাগবে। সরকারি চাকুরেরা তবু কিছুটা সুবিধা পান কিন্তু বেসরকারি চাকরি বা কলকারখানায় চাকরিরতরা এখনো সে সুবিধা পান না।

এ তো গেল ঘরের বাইরের গল্প। এ সময়টা ঘরের লোকদেরও আচরণ পাল্টে যায়। স্বামী যদি সহানুভূতিশীল হয় তো শাশুড়ি অত্যাচারী আর শাশুড়ি সহানুভূতিশীল হলে স্বামী। শাশুড়ি পদে পদে তুলনা করেন তার সময় আর এ সময়ের। আমাদের সময় এই ছিল না, সেই ছিল না। তোমাদের এতকিছু লাগে, কেন লাগে? আমরা কি সন্তান পেটে ধরিনি? আবার শারীরিক অসুবিধা বুঝতে চায় না অনেক স্বামী ও শাশুড়ি। এসব নিয়েও শুরু হয় কলহ, ক্ষেত্র বিশেষে মারপিট। গর্ভবতী নারীর কখনো কখনো এদের অত্যাচারে-অনাদরে-অবহেলায়-অপচিকিৎসায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে। মাতৃত্বকালীন নির্যাতন অথবা প্রসবকালীন সহিংসতা বলতে এই সময় মহিলারা যে অবহেলা, শারীরিক নির্যাতন এবং অসম্মানের শিকার হন তাকে বোঝায়। এই ধরনের ব্যবহার নারী অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হয়।

গর্ভবতী নারীর গর্ভকালীন যেভাবে যতœ নেওয়া উচিত, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামী বা পরিবার পালন না করে তার প্রতি অবহেলা ও অবিচার করে। স্ত্রীর গর্ভাবস্থায় অনেক পুরুষই জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়, স্ত্রীর ক্রমাগত মুড সুইং বা অসুস্থতাও সামাল দিতে পারেন না কেউ কেউ। এ ছাড়া নানান পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিক সমস্যা তো আছেই।

গর্ভবতী নারীর গর্ভের আকার বৃদ্ধি পেলে সেটা নিয়েও তাকে অস্বস্তিতে কাটাতে হয়। স্ফীত পেট দেখে কিছু পুরুষ তখন দূরে বসে উপহাস ও বিদ্রƒপাত্মক কথাবার্তা বলে। এটা তাদের এক ধরনের বিকৃত আনন্দের খোরাক। তারা ভুলে যায় যে, তারাও আকাশ থেকে পড়েনি। এমন অমানবিক আচরণের কারণে নারীরা কেউ কেউ প্রতিবাদ করে, কেউ কেউ বিব্রতবোধ করে বাড়ানো পেটটি কোনো অতিরিক্ত কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেই বাইরে চলাচল করে থাকে। আশপাশের মানুষ তাকে যতই সাহস দিক না কেন, সে এক রকম মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে। যে কোনো মা গর্ভাবস্থায় সব সময় চিন্তায় থাকেন। তার সন্তান ঠিকমতো পৃথিবীতে আসবে কিনা, কোনো সমস্যা হবে কিনা। সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে করোনা পরিস্থিতি। তিনি নির্ধারিত সময়ে যে চিকিৎসকের কাছে চেকআপে যাবেন তখন যাতায়াত, যানবাহন পাবেন কিনা, তার চিকিৎসক ঠিকমতো চেম্বারে বসবেন কিনা, তিনি করোনায় আক্রান্ত হবেন কিনাÑ এগুলো নিয়ে তার মধ্যে সব সময় একটা দুশ্চিন্তা থাকে।

করোনা সংক্রমণের ভয়ে আতঙ্কে দিন যাপন করছেন গর্ভবতী নারীরা। চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না তারা। শেষ মুহূর্তে জটিল অবস্থায় হাসপাতালে যেতে হয়েছে অনেককে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালে গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসাসেবা নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক।

জানা যায়, করোনাকালে মাতৃমৃত্যু বেড়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এমন তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই। সংক্রমণের ভয় এবং যাতায়াতসহ নানা সমস্যা প্রসবকালীন সেবা থেকে বিব্রত হচ্ছেন নারীরা। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, করোনার সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কমে যাওয়ায় বেড়েছে মাতৃমৃত্যু। মহামারীর আগে ৫০ শতাংশ প্রসব হতো বাড়িতে, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের মার্চে প্রসব-পূর্ব সেবা পাওয়া গর্ভবতী ছিলেন ৪২ হাজার ৫২৬ জন, ২০২০ সালের মার্চে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৬ হাজার ৪১৫। জাতিসংঘ বলছে, কোভিডের নানামুখী প্রভাবে ২০২০ সালে প্রায় দুই লাখ ২৮ হাজার শিশুমৃত্যু এবং ১১ হাজার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে সন্তান প্রসবকালে এখনো মায়েদের মৃত্যুর হার বেশি আর এর কারণও নারীর প্রতি অবহেলা। নারীকে ছোট করে দেখার প্রবণতার কারণই এই অবহেলার মূলে। নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে এই হীনম্মন্যতা থেকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877